হঠাৎ কোন কর্ণেল বাঁশি বাজালেন আর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল তেমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। এভাবে কোন দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। এর জন্যে অনেক ত্যাগ, কষ্ট ও জীবন দিতে হয়েছে, সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা সহ্য করতে হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়েছে। একজন খাঁটি সাহসী দেশপ্রেমিক নেতার প্রয়োজন হয়। বৃটিশরা হঠাৎ করে এদেশ থেকে চলে যায়নি কিন্তু তারা যখন বুঝলো এদেশে থাকার আর প্রয়োজন নেই এবং এদেশের মানুষেরা তাদেরকে আর চায় না, তখনি তারা চলে গিয়েছিল। বহু আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছিল।
তাদের যাওয়ার প্রক্রিয়াটা আমাদের জন্যে সুখের ছিল না, যাবার সময় তারা আমাদেরকে এমন করে ভাগ করে দেয় যে, সে ভাগের মধ্যে আমরা ঝগড়া বিবাদে সব সময়ে জড়িয়ে থাকব আর নিজেদের মধ্যে মারামারি করব। ভারত এবং পাকিস্তানের জন্ম হল, পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত – পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান, যার মধ্যে ব্যবধান প্রায় হাজার মাইল। এদের মনের মধ্যেও মিল নেই, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও মিল নেই, আর ভাষার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজিত ছিল। শুধু ধর্মের ক্ষেত্রেই কিছু মিল আছে কিন্তু সে ক্ষেত্রেও বিরাট ফারাক, তা আমরা চব্বিশ বছরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। তাই বলছিলাম যে, আমাদের দেশের ইতিহাস বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যিক।
বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে বলছি, যারা আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, বাইশ বছর ধরে তারা ইতিহাসের পাতা মেলাতে পারেনি। ইতিহাস বিকৃতির এক মহোৎসবের নীরব সাক্ষী। তাই নতুন প্রজন্ম এর থেকে বের হতে হলে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানতে হবে। যিনি সারা জীবনটা বাঙালি জাতির জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন, শেষতক ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে মৃত্যু বরণ করেন। এটা ছিল জাতির জন্যে অত্যন্ত লজ্জা ও দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। আমি স্বাধীনতা আন্দোলন দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার মতো এখনো হাজার হাজার মানুষ বেঁচে আছেন যারা এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আমি এখানে আলোচনা করছি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা কর্তৃক সম্পাদিত ” বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ” বইটি সম্পর্কে। এটি বঙ্গবন্ধুর ২৭টি ভাষণ নিয়ে সম্পাদিত একটি গ্রন্থ।
প্রকাশক, রাবেয়া খাতুন, রাবেয়া বুকস্ ৩৮-৪ বাংলা বাজার, ঢাকা-১১০০ পৃঃ ৩৫২
দামঃ ৫০০ টাকা
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বলতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণই প্রধানত আমাদের বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাজানো হয়। সেই ভাষণই অনেকে শুনে থাকেন।
সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ। আমার মতে সেই ভাষণই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ। আমার সৌভাগ্য হয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ভাষণ পড়ে দেখার সুযোগ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে জাতিকে প্রস্তুত করার জন্য দিকনির্দেশনামুলক বক্তৃতা দেন যা বাঙালি জাতি কোনদিনই ভুলে যাবে না। এটি এখন ইউনেস্কো কর্তৃক সংরক্ষিত।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছাড়াও জনসভায়, জাতীয় সংসদে অথবা অন্যান্য জায়গায় যে ভাষণগুলো দেন তা জাতির জন্য এক বিরাট মূল্যবান দলিল। প্রতিটি ভাষণেই রয়েছে আমাদের অজানা কথা, ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। আমরা অনেক কিছুই জানি না, তাঁর ভাষণ পড়লেই আমরা অনেক ইতিহাসের তথ্য, উপদেশ ও নির্দেশনা জানতে পারি।আমি এখানে কিছু ভাষণের কিছু কিছু উল্লেখ করতে চাই। ১৯৭২ সালের ১২ই অক্টোবর ঢাকায় গণপরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জয় বাংলা শ্লোগানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন,” এক ছেলে আমার কর্মী। মিলিটারি তাকে ধরে বললঃ জয় বাংলা বলতে পারবি না।
সে বললঃ জয় বাংলা বলবোই। তখন তার একটা হাত কাটে। বললঃ জয় বাংলা বলবি? সে বললঃ জয় বাংলা। তখন তার বাম হাত কেটে দেওয়া হলো। তার দু’খানা হাত কেটে দেওয়া হলেও সে বললঃ জয় বাংলা। তার একটা কান কেটে দিল। বললঃ বলবি জয় বাংলা? তারপর অপর কানটি কেটে দিল। বললঃ বলবি জয় বাংলা? ছেলেটি বললঃ জয় বাংলা। তার বা পা কেটে ফেলে দিল। তখন তার জান প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তাকে বললঃ বলবি জয় বাংলা? সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে করতে বললঃ জয় বাংলা।”
০২
১৯৭২ সালের নভেম্বরের ৪ তারিখে গণপরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদন উপলক্ষে যে বক্তৃতা দেন স্পীকারকে উদ্দেশ্য করে তাতে আমরা রাষ্ট্রের মূলনীতির পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা পাই। আমাদের মূলনীতি সম্পর্কে জানা উচিত যা তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে খোলাসা করে গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের কথা বলেন। এই আলোচনা জানা খুবই দরকার। কারণ, এই নিয়ে বহু বিভ্রান্তিমূলক কথা শুনা যায়। অপব্যাখ্যা করা হয় যা মোটেই কাম্য নয়। যারা এই ভাষণটি পড়বেন তারা সঠিক চিন্তা করার সুযোগ পাবেন। যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আমাদের মধ্যে অপপ্রচার রয়েছে। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আমাদের দেশজ উপযোগী একটা ব্যাখ্যা দেন। এ ছাড়াও এই ভাষণের মধ্যে পাওয়া যাবে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৭টি স্তর থাকবে তা পরিষ্কার করে বলা আছে। বর্তমানে ২০টি স্তরে বিন্যাস করা হয়েছে।
১৯৭২ সালে ১৯শে আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে কর্মীদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন,” একদল লোক আছে যারা আবার বড় বড় বক্তৃতা করে। চুরি করে, হাইজ্যাকের গাড়িতে চড়ে। ঢাকায় বাড়ি করে থাকে। উপার্জনের কোন হদিস নাই। কোত্থেকে পয়সা পায়, কোত্থেকে খায়, বড় গাড়িতে চড়ে, বড় বাড়িতে থাকে। আর অন্যদিকে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা করে। সেই জন্য বলছি, আত্মসমালোচনা করে আত্মসংযম অভ্যাস কর। তা হলে মানুষ হতে পারবে। তোমাদের ছাত্রলীগ বড় সংগ্রামী প্রতিষ্ঠান। অনেকবার এর মধ্যে ভাঙ্গন ধরেছে। পরগাছা অনেক বের হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয় নাই। বিপ্লবের পরে কয়েকটা বছর বড় সাংঘাতিক যায়। এই সময়ে যদি তোমরা যুবসমাজ, ছাত্রসমাজ হুশিয়ার না থাক, স্বাধীনতার শত্রুরা মাথা তুলে উঠে এমন ছোবল মারবে যে, আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়ে উঠবে।
স্বাধীনতার শত্রুরা আজ সংঘবদ্ধভাবে দেশের ভিতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। যুবসমাজকে যেমন আগে ডাক দিয়েছিলাম, তেমনি আজও ডাক দিয়ে যাই – তোমরা বিপদমুক্ত হও নাই। তোমাদের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য, তোমাদের ঈপ্সিত সমাজতন্ত্রের লক্ষকে বানচাল করার জন্য, তোমাদের আদর্শকে ধ্বংস করার জন্য শত্রুরা চারদিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে। তোমরা সংঘবদ্ধ থাকলে ওদের কিভাবে ঠান্ডা করতে হয় তা ইনশাআল্লাহ আমি জানি।”
১৯৭৪ সালে ১৮ জানুয়ারি আওয়ামীলীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বলেন, ” ৭ মার্চ কি স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বাকি ছিল? প্রকৃতপক্ষে ৭ মার্চই স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেদিন পরিষ্কার বলা হয়েছিল – এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম – এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।”
ঐতিহাসিক ৭ জুন ১৯৭২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ” ২৫ মার্চ রাত্রে ইয়াহিয়ার বর্বর বাহিনী আমার উপর আক্রমণ চালায়। সেদিন রাত্রে আমার অবস্থা যে কেমন ছিল সেটা কেবল আমিই জানি। আমি জানতাম ঘর থেকে বের হলেই আমাকে গুলি করে মারবে। মৃত্যুর জন্য আমি প্রস্তুত হয়েই ছিলাম। কিন্তু বাংলার মাটিকে আমি ছাড়তে পারি নাই। রাত্রি ১১টার সময় আমার সমস্ত সহকর্মীকে, আওয়ামী লীগের নেতাদের হুকুম দিলাম – বের হয়ে যাও।
যেখানে পার, এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। খবরদার, স্বাধীনতা না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেয়ো।রাত্রে আমি চট্টগ্রামে নির্দেশ পাঠালাম। আগে যাকে ইপিআর বলা হতো, তাদের সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামে। পিলখানা হেডকোয়ার্টার শত্রুরা দখল করে নিয়েছে। ওদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল। আমি যখন পিলখানার সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম না তখন আমি চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ করে বললামঃ ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন – তোমরা বাংলার সব জায়গায় এই খবর দিয়ে দাও। পুলিশ হোক, সেনাবাহিনী হোক,আওয়ামীলীগ হোক, ছাত্র হোক; যে যেখানে আছে, পশ্চিমাদের বাংলা থেকে খতম না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাও। বাংলাদেশ স্বাধীন।’তারা আমার কথামতো খবর পৌঁছিয়েছিল।”
০৩
জাতীয় সংসদে ২৫ জানুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখে প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব জাতীয় ঐক্য গঠন ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ঘোষণা। এই ঘোষণার ফলে এক ধরনের নতুন শাসন ব্যবস্থার কথা বলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি এক জায়গায় বলেন, ” যারা দেশকে ভালোবাসেন, সকলকে আমি আহবান করব আসুন, দেশ গড়ি।
আসুন, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাই। আসুন, দেশের মানুষের দুঃখ দুর করি। তা না করতে পারলে ইতিহাস আমাদের মুখে কালিমা লেপন করবে।”
এই প্রবন্ধের কলেবর সীমিত রাখার জন্য সব ভাষণের বিষয়ে আলোকপাত করা গেল না। সব বিষয়গুলো আনলে ভালো হতো। আমার উদ্দেশ্য হলো এই বইটি সম্পর্কে কৌতূহল সৃষ্টি হোক এবং বইটি পড়ার আগ্রহ জাগ্রত হোক তা হলেই আমার লেখাটি সার্থক হবে।
বঙ্গবন্ধু বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মহানায়ক। তিনি আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের প্রাণ পুরুষ। বাঙালি জাতিকে তিনি নিষ্পেষণ অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করতে এমন কোন কাজ নাই যা করেননি। সেই ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতিকে তিনি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেন। এ দিতে গিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে একথা সবারই জানা। তাঁর সোনালি যৌবন তিনি জাতির জন্যে উৎসর্গ করেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর কারো হিম্মত ছিল না। সে সময় যারা রাজনীতি করতেন তাদের অধিকাংশ ছিল মুসলিম লীগ সরকারের পা চাটা দালাল যাদের মেরুদণ্ড বলতে কিছু ছিল না। আমার মনে সেই কথাগুলো নতুন প্রজন্মের জানতে সহায়ক হবে যদি তারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সমগ্র পড়ে এবং অন্তর দিয়ে জানার চেষ্টা করে।
শুধু এই ২৭টি ভাষণই পড়লে হবে না আরোও যেগুলো ভাষণ আছে সেগুলো জানার চেষ্টা করতে হবে। সে ভাষণগুলো পড়লে তারা জানতে পারবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পূর্বে দেশের স্বাধীনতার জন্যে কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর এক একটি ভাষণ আমাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক জীবনে বহু উপকারে আসবে। আমাদের রাজনৈতিক দুরত্ব আছে তাও মিমাংসা করার পথ বের হবে। বঙ্গবন্ধুর এক একটি ভাষণই আমাদের রাষ্ট্রের জন্য দিক নির্দেশনা এবং আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের দর্শন। বলা যেতে পারে আমাদের রাষ্ট্রের জন্য একটি দর্পনের মতো। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন তখন দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা খুবই নাজুক ছিল যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। আজকের অবস্থা দেখে ১৯৭১ সালকে বিচার করা যাবে না।
তাই বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের দেশ পরিচালনার বিষয়টি যদি আমরা একটু খোলা মন নিয়ে চিন্তা করি তাহলেই একমাত্র উপলব্ধি করা সম্ভব। আমি যখন ভাষণগুলো নিয়ে পড়ি এবং চিন্তা করি তখন মনে হয়েছে একটি ধ্বংস বিধস্ত প্রাপ্ত দেশকে কিভাবে টেনে তুলেছেন উন্নয়নের সিঁড়িতে। ভাবলে অবাক লাগে! বহু অর্থনৈতিক পরামর্শ এই ভাষণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ছড়ানো ছিটানো আছে। নৈতিক অধঃপতনের দ্বার প্রান্তে একটি জাতিকে কিভাবে তিনি উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। যে দার্শনিক গাইড লাইন পাওয়া যাবে তা থেকে বঞ্চিত হবে আমাদের নতুন প্রজন্ম যদি তারা না পড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সমগ্র। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে এই ভাষণগুলো প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার জন্যে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা কর্তৃক সম্পাদিত ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ‘ এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞা,জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, দর্শন ও বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ করার এক নতুন দিগন্ত। যে কোন ব্যক্তির জন্যেই এই বই এক ভিন্ন মাত্রার আগ্রহের সঞ্চার করবে এতে বিন্দু মাত্রও সন্দেহ নেই। এই বই দেশ ও জাতির প্রতি আরও দায়িত্বশীল, দেশাত্মবোধে ও দেশের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করবে।
পরিশেষে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণের অংশ বিশেষ উল্লেখ করে শেষ করতে চাইঃ ” আমরা বাঙালি। আমরা জাতীয়তাবাদ বিশ্বাস করি। আমি যদি ভুলে যাই – আমি বাঙালি, সেদিন আমি শেষ হয়ে যাবো। আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ, বাংলার মাটি আমার প্রাণের মাটি, বাংলার মাটিতে আমি মরবো। বাংলার কৃষ্টি বাংলার সভ্যতা আমার কৃষ্টি ও সভ্যতা। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদ তোমাদের মনে রাখতে হবে।”
তাই আসুন, বসে না থেকে গল্পে গল্পে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পড়ি।
লেখকঃ কবি ও প্রাবন্ধিক (প্রফেসর ও সাবেক ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া মোবাইলঃ০১৭১৫৫৭১৬২২